কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা এই বিষয়গুলো জানতে ইচ্ছুক। তারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

কলা খাওয়ার-২০-টি-স্বাস্থ্য-উপকারিতা-অপকরিতা-ও-পুষ্টিগুণ

কলা সহজলভ্য ও অতি পরিচিত জনপ্রিয় একটি ফল। কলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে।

পেজ সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে

কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা 

কলা আমাদের অতি পরিচিত এবং খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। কলা একটি বারোমাসি ফল। ফলে কলা সারা বছর বাজারে অনেক কম দামে কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর এই ফলটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা খুবই জরুরী। আসুন জেনে নেওয়া যাক কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা

  • হজম শক্তি বাড়ায়ঃ কলাতে রয়েছে ফাইবার বা আঁশ। ফাইবার বা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কার্যসম্পাদন করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরের হজম শক্তি বাড়ে।
  • হার্ট সুস্থ রাখেঃ কলাতে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের রোগ হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত। তাহলে হার্ট সুস্থ থাকবে।
  • ওজন কমায়ঃ যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক। তারা কলা খেতে পারেন। কারণ কলাতে থাকা ফাইবার ও ক্যালোরি অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না।
  • শক্তি বাড়ায়ঃ কলাতে কার্বোহাইড্রেট ও চিনি রয়েছে। কার্বোহাইড্রেট ও চিনি আমাদের শরীরে সঙ্গে সঙ্গে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। আপনার যদি শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। তাহলে আপনি কলা খেতে পারেন। কারণ কলা সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে শক্তি দিতে সাহায্য করবে।
  • ত্বক ভালো রাখেঃ কলাতে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই আপনি ত্বক ভালো রাখতে কলা খেতে পারেন।
  • মন ভালো রাখেঃ কলাতে ট্রিপটোফান রয়েছে।এই ট্রিপটোফান পুষ্টি উপাদানটি আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।সেরোটোনিন হরমোন বাড়ার ফলে আমাদের মন অনেক ভালো থাকে। এছাড়াও নিয়মিত কলা খেলে আমাদের ঘুম অনেক ভালো হয়। ফলে আমাদের মন মস্তিষ্ক অনেক ভালো থাকে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতেঃ কলাতে আয়রন নামক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন বাড়ার ফলে আমাদের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর হয়। এছাড়া নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • কিডনির ঝুঁকি কমায়ঃ কলাতে পটাশিয়াম নামক একটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পটাশিয়াম কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং কিডনির স্বাভাবিক অবস্থা ঠিক রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ফলে কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাই আপনি কিডনি ভালো রাখতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।
  • মানসিক চাপ কমাতেঃ কলাতে পটাশিয়াম নামক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পটাশিয়াম আমাদের শরীরের নার্ভের কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ফলে আমাদের মানসিক চাপ কমে।
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ কলাতে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬ আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত।
  • হাড় মজবুত করতেঃ কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। আপনি যদি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খান। তাহলে আপনার হাড় মজবুত ও শক্ত হবে।
  • চুলের যত্নেঃ কলাতে রয়েছে রয়েছে পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। পটাশিয়াম ও ভিটামিন চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। আপনি যদি কলার পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। তাহলে আপনার চুল অনেক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে।
  • ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতেঃ আমাদের শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে। কলাতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের প্রত্যহিক চাহিদার ১৫% পূরণ করতে সাহায্য করে। কলাতে থাকা ভিটামিন বি৬ আমাদের শরীরের চাহিদার প্রায় ৫% ভিটামিন বি৬ পূরণ করে। আমাদের শরীরের সুস্থ কোষ তৈরি করার জন্য দরকারি অ্যামিনো অ্যাসিড, হিমোগ্লোবিন, ইনসুলিন গঠন করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
  • ডায়াবেটিস কমায়ঃ কলাতে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে। ফাইবার বা আঁশ রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সুতরাং, আপনি আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে। তাহলে আপনি পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।
  • চোখ ভালো রাখতেঃ কলাতে ভিটামিন এ নামক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ভিটামিন এ আমাদের চোখ ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।
  • পেটের রোগ দূর করেঃ কলাতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং আঁশ বা ফাইবার আমাদের পেটের বিভিন্ন রোগ দূর করতে সাহায্য করে। যেমনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া  ইত্যাদি।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে তাই আপনি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।
  • শরীরের জ্বালাপোড়া কমায়ঃ কলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জ্বালাপোড়া কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই আপনার শরীর যদি জ্বালাপোড়া করে তাহলে আপনি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ কলাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে পারেনা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আপনি নিয়মিত পরিমিত পরিমানে কলা খেতে পারেন।
  • দাঁত ভালো রাখেঃ কলাতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই আপনি দাঁত ভালো রাখতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খেতে পারেন।

কলা খাওয়ার অপকারিতা

কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর উপকারী। তবে অতিরিক্ত যদি কলা খাওয়া যায় তা উপকারের বদলের অপকারিতা বয়ে আনে। তাই আমাদের নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত। আমরা যদি নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে কলা খায়। তাহলে কলার উপকারিতাগুলো আমাদের শরীর ধারণ করতে পারবে আসুন জেনে নেওয়া যাক কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

  • যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তারা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য কলা ক্ষতিকর।
  • যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কলাতে রয়েছে শর্করা। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খান তাহলে আপনার শরীরের শর্করার মাত্রা বেড়ে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
  • যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা কলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। কারণ কলাতে রয়েছে টাইরামাইন পুষ্টি উপাদান। এই পুষ্টি উপাদানটির কারণে মাইগ্রেন রোগ হয়ে থাকে।
  • যাদের কলা খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। তারা কলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে। আপনি যদি অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে কলা খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে। তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • যাদের কলা খাওয়ার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • যাদের কলা খাওয়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খাওয়া উচিত।

কলার পুষ্টিগুণ সমূহ

কলা আমাদের অতি পরিচিত একটি ফল। কলা খেতে বেশিরভাগ মানুষই ভালোবাসে। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। কলাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে বলে কলাকে "সুপার ফুড" বলা হয়ে থাকে। কলা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আসুন জেনে নেওয়া যাক কলার পুষ্টিগুণ সমূহ সম্পর্কে।

কলাতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমনঃ পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার বা আঁশ,প্রাকৃতিক চিনি।

কলার কি কি জাত রয়েছে 

কলার অনেক রকম জাত রয়েছে। তবে আমাদের বাংলাদেশের কৃষকেরা কয়েকটি জাতের কলা চাষ করে থাকে। একেক জাতের কলার একেক রকম পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়াও একেক জাতের কলার একেক রকম বৈশিষ্ট্য ও স্বাদ। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কলার কি কি জাত রয়েছে?

কলার-কি-কি-জাত-রয়েছে

  • সাগর কলা
  • সবরি কলা
  • অমৃত সাগর
  • অগ্নিশ্বর
  • দুধ সাগর
  • দুধসর 
  • সিঙ্গাপুরি কল
  • চাম্পা বা চিনি চাম্পা কলা
  • কবরী 
  • চন্দন কবরী 
  • জাবকাঠালি 
  • বারি কলা ১
  • বারি কলা ২
  • বারি কলা ৩ 
  • বারি কলা ৪
  • বিচি কলা
  • এটেকলা 

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। পুষ্টিবিদদের মত অনুযায়ী, কলা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি ফল। অনেকেই মনে করে রাতে কলা খাওয়া ঠিক নয়। তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। পুষ্টিগুণে ভরপুর এর কলা আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী একটি ফল। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, রাতে কলা খাওয়া কোন ক্ষতিকারক নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

  • কলাতে ট্রিপটোফান ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই দুইটি উপাদান ভালো ঘুম হওয়ার জন্য সাহায্য করে।
  • রাতের খাবার পর যদি কলা খান। তাহলে আপনার শরীরে সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে শক্তি সরবরাহ করে।
  • যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য রাতের খাবারের পর কলা খাওয়া উচিত। কারণ রাতে খাবারের পর যদি কলা খান তাহলে অনেকটা আরাম লাগে।
  • রাতে খাবারের পর কলা খেলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
  • রাতে খাবারের পরে কলা খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া কমিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
  • তবে যাদের ঠান্ডা বা সর্দির সমস্যা রয়েছে। তাদের রাতের বেলা কলা না খাওয়াই উচিত। কারণ কলা একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। এছাড়াও যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে। তাদের রাতের বেলা কলা খাওয়া উচিত নয়। যাদের সাইনাস এর সমস্যা রয়েছে তারা রাতের বেলা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কলা মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা রাতের বেলা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তবে যাদের এসব সমস্যা নাই তারা যদি রাতের বেলা কলা খায়। তাহলে তাদের কোন সমস্যা হয় না। সবচেয়ে ভালো হবে কলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

খালি পেটে কলা খেলে কি হয়

সকালের খাবার আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালে যদি আপনি পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খান। তাহলে আপনার সারাদিন শরীরটা অনেক ভালো থাকবে। আপনি ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন এবং সুস্থ থাকবেন। কলা আমাদের শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী একটি ফল। আমাদের খাদ্য তালিকায় আমরা কলা রাখতে পারি। কলা তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। তাই আপনার যদি তাৎক্ষণিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাহলে আপনি কলা খেতে পারেন। তাহলে আসুন জেনে নেওয়ার জায়গা খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?

  • বিশেষজ্ঞদের মতে, খালি পেটে কলা না খাওয়াই ভালো। কেননা সকালে খালি পেটে কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের খালি পেটে কলা না খাওয়াই ভালো। এছাড়াও খালি পেটে কলা খেলে রক্তে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের সামঞ্জস্য নষ্ট হতে পারে। ফলে হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি বাড়ে। 
  • এছাড়াও খালি পেটে কলা খেলে এসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। কলা শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী। আপনি কলা খেতে পারেন তবে কলা খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। ওটস, কাঠবাদাম, ম্যাপল সিরাপ  বেরি, কলা একসঙ্গে  মিশিয়ে আপনি স্মুদি  বানিয়ে খেতে পারেন। পুষ্টিবিদদের মত অনুযায়ী, সকালে খালি পেটে কলা না খেয়ে সকালের খাবার পরে কলা খাওয়া ভালো।

কলা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়

কলা আমাদের অতি পরিচিত একটি ফল। কলা সারা বছরই চাষ করা হয় বলে এটি আমরা বাজারে সারা বছর কিনতে পারি। কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর উপকারী। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা উচিত। কলা পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। কলা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কলা কি কি উপায়ে খাওয়া যায় সেই সম্পর্কে?

  • কলা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়।
  • কলা পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে আমরা খায়।
  • কলা, ম্যাপল সিরাপ, বেরি, কাঠবাদাম, ওটস একসঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যায়।
  • কলা দিয়ে রুটি বানিয়ে খাওয়া যায়।
  • কলা দিয়ে কেক বানিয়ে খাওয়া যায়।
  • স‍্যালাড বা ওটমিলের সঙ্গে একসঙ্গে মিশিয়ে কলা খাওয়া যায়।

কলা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

কলা দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে কলা সকালে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। সকালে হালকা খাবার খাওয়ার পরে কলা খাওয়া উচিত। এছাড়াও রাতে খাবার পর কলা খেতে পারেন। রাতে খাওয়ার পর কলা খেলে ঘুম অনেক ভালো হয়। তবে যাদের কলা খাওয়ার পরে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তারা কলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।

আরো পড়ুনঃ ছেলেরা তেঁতুল খেলে কি হয়? তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

দিনে ১ থেকে ২ টি কলা খাওয়া উচিত। কলা, ম্যাপল সিরাপ, বেরি, কাঠবাদাম, ওটস একসঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও কলা পাউরুটির সঙ্গে খেতে পারেন। স‍্যালাড বা ওটমিলের সাথে কলা খেতে পারেন। কলা দিয়ে তৈরিকৃত রুটি ও কেকও খাওয়া যায়। কলা জুস করেও খাওয়া যায়। কলা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টি উপকারিতা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় গর্ভবতী মায়ের ও পেটের বাচ্চার সুস্থতার জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে হবে। কলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে পারেন। এতে গর্ভবতী মা ও পেটের বাচ্চা উভয়ের জন্য উপকার বয়ে আনবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা। 

গর্ভাবস্থায়-কাঁচা-কলা-খাওয়ার-উপকারিতা

  • কাঁচা কলাতে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভের বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের কাঁচা কলা খাওয়া উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে গর্ভবতী মায়ের মন ভালো থাকে। এর ফলে গর্ভের বাচ্চার মানসিক সামঞ্জস্য ঠিক থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে গর্ভের বাচ্চার পা এবং হাতের মাংসপেশি শক্ত হয়।
  • গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খেলে গর্ভবতী মায়ের খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি পায়।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে গর্ভের বাচ্চার ওজনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা কাঁচা কলা যদি খায়। তাহলে গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে   বদহজম, পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানার সমস্যা দূর হয়।
  • কাঁচা কলা তে থাকা ভিটামিন সি গর্ভের বাচ্চার দেহ গঠন করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাইগর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের কাঁচা কলা খাওয়া উচিত। 
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে কাঁচা কলাতে থাকা পুষ্টিগুণ গর্ভের বাচ্চার মস্তিষ্ক গঠন করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি কাঁচা কলা খায়। তাহলে কাঁচা কলাতে থাকা পুষ্টিগুণ গর্ভের বাচ্চার স্নায়ুর কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা কলা খাওয়ায় গর্ভবতী মায়ের কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাঁচা কলা খেতে হবে।

লেখকের শেষ কথা (কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা-কলার অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে  )

কলা স্বাস্থ্যকর পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। কলা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে আমরা যদি কলা খায়। তাহলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। আজকের এই আর্টিকেলটিতে কলা খাওয়ার ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা - কলার অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে কলার স্বাস্থ্য উপকারিতা, অপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং কলার অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শেয়ার করুন। এর ফলে আপনার বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনরাও এই আর্টিকেলি পড়ে উপকৃত হতে পারবে। আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আরাম্ভ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url